কৃত্রিম উপগ্রহের ইতিবৃত্ত



 

 

কৃত্রিম উপগ্রহ কি ?

আমরা সকলেই জানি যে গ্রহগুলো  পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে  তাকে উপগ্রহ বলা হয় আর উপগ্রহ আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে একটা হল কৃত্রিম আরেকটা হল  প্রাকৃতিক তেমনি স্যাটেলাইট হচ্ছে একটা উপগ্রহ যেই উপগ্রহ মানুষের দ্বারা সৃষ্টি। তাই সহজেই বোঝা  যাচ্ছে স্যাটেলাইট একটা কৃত্রিম উপগ্রহ।কৃত্রিম উপগ্রহ হলো মহাকাশে উতক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত উপগ্রহ।স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার খবর আমরা নিমিষেই পেয়ে যাই।

 

কিভাবে উপরে পাঠানো হয় ?

কোনো বস্তুকে যদি অভিকর্ষের সমান বলে বিপরীত দিকে ঠেলে দেয়া যায়, তবে যেখানে গিয়ে অভিকর্ষ বল নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে,সেখানে বস্তুটি চাঁদের মতো পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকবে।এরজন্য স্যাটেলাইটকে প্রায় 930 কিলোমিটার উঁচুতে পাঠাতে হয়। এই উচ্চতায় তুলে ঘণ্টায় 39 হাজার কিলোমিটার বেগ দিয়ে পৃথিবীর সমান্তরালে ছেড়ে দিলেই এটি ঘুরতে থাকবে।আর মজার ব্যাপার হলো, এই বেগটা এক ধাপে তোলা যায় না। তোলা হয় তিন স্তরে।তিন স্তরে তোলার কারণ হলো প্রথম স্তরে থাকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। সেখানে এতো বেগে বায়ুর সাথে ঘর্ষণ হলে আগুন জ্বলে উঠবে এবং স্যাটেলাইট পুড়ে যাবে। এই জন্য বায়ুস্তর অতিক্রম করার পর এই বেগ তোলা হয়। উপগ্রহটি বসানো হয় রকেটের মাথায়। জ্বালানি এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি রকেটের ভিতরে থাকে। রকেটেরও তিনটি স্তর থাকে। নিচু স্তরের রকেটটি অন্য দুটো রকেট এবং স্যাটেলাইট বহন করে খাড়াভাবে 80 কিলোমিটার উপরে উঠে গিয়ে খসে পড়ে। এতে করে বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে ঘনস্তরের সাথে ঘর্ষণ এড়ানো যায়। এরপর দ্বিতীয় রকেটটি ভূস্তরের সাথে 45 ডিগ্রী কোণ করে চলতে থাকে এবং তৃতীয় রকেটটিকে 160 কিলোমিটার উপরে তুলে দেয়। তখন এর বেগ হয় ঘণ্টায় 16 হাজার কিলোমিটার।এসময় দ্বিতীয় রকেটটি খসে পড়ে। তৃতীয় স্তরের রকেটটি ঘণ্টায় 39 হাজার কিলোমিটার বেগ সঞ্চার করে খসে পড়ে এবং উপগ্রহটি 930 কিলোমিটার উপরে উঠে ঘুরতে থাকে। স্যাটেলাইটকে রকেট বা স্পেস শাটলের কার্গো বে-এর মাধ্যমে কক্ষপথে পাঠানো হয়। পাঠানোর সময় রকেট নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয় ইনার্শিয়াল গাইডেন্স সিস্টেম (আইজিএস) মেকানিজম। পৃথিবীর অভিকর্ষ পার হতে রকেটকে ঘণ্টায় ২৫ হাজার ৩৯ মাইল ত্বরণে ছুটতে হয়।

স্যাটেলাইট স্থাপনের সময় কক্ষীয় গতি তার জড়তার ওপর পৃথিবীর অভিকর্ষের যে প্রভাব রয়েছে, এর জন্য সামঞ্জস্য বিধান করতে না পারলে স্যাটেলাইট অভিকর্ষের টানে ফের ভূপৃষ্ঠে চলে আসতে পারে। জন্য স্যাটেলাইটকে ১৫০ মাইল উচ্চতাবিশিষ্ট কক্ষপথে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭ হাজার মাইল গগিতে পরিভ্রমণ করানো হয়। মূলত গতিবেগ কত হবে, তা নির্ভর করে স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে কত উচ্চতায় রয়েছে, তার ওপর।পৃথিবী থেকে ২২ হাজার ২২৩ মাইল উপরে স্থাপিত স্যাটেলাইট ঘণ্টায় ৭০০ মাইল বেগে পৃথিবীকে আবর্তন করে। উপগ্রহ পৃথিবীকে ঘুরে আসতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা।তবে কিছু কিছু স্যাটেলাইট আছে, যাদের আবর্তনকাল পৃথিবীর আবর্তনকালের সমান অর্থাৎ 24 ঘণ্টা।


 স্যাটেলাইট কত প্রকার কি কি?

মূলত স্যাটেলাইট তিন(০৩) প্রকার,

ক। লো-আর্থ অরবিট (LE0-Low Earth Orbit)

খ। মিডিয়াম আর্থ অরবিট (ME0- Medium Earth Orbit)

গ। জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (GE0-Geostationary Earth Orbit)

 

লো-আর্থ অরবিট (LEO-Low Earth Orbit)

লো-আর্থ  অরবিট এর স্যাটেলাইট পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে ১৬০-,০০০ কি.মি. উপড়ে অবস্থান করে। যে স্যাটেলাইটগুলাতে  দ্বারা পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা হয় সাধারণত সেই স্যাটেলাইটগুলাকেই এই কক্ষপথে রাখা হয় যেহেতু এই স্যাটেলাইটগুলাতে পৃথিবী পৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে তাই এই স্যাটেলাইটগুলাতে দ্বারা প্রায় নিখুঁত ভাবে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা যায় এই কক্ষপথেই আন্তর্জাতিক স্পেস ষ্টেশনের অবস্থান।

মিডিয়াম আর্থ অরবিট (MEO- Medium Earth Orbit)

মিডিয়াম আর্থ অরবিটের স্যাটেলাইট পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে ২০,০০০ কি.মি. উপড়ে অবস্থান করে। এই কক্ষপথের স্যাটেলাইটগুলাতে পাঠাতে অনেক শক্তির দরকার পরে মিডিয়াম আর্থ অরবিটের স্যাটেলাইটগুলোর   গতিবেগ খুবই মন্থর হয়ে থাকে। মোট  ১২টি মিডিয়াম আর্থ অরবিটের স্যাটেলাইট দিয়ে পুর পৃথিবীতে সংযোগ  করা যায়, এর সংখ্যা জিওস্টেশনারি আর্থ এর থেকে বেশি কিন্তু লো-আর্থ  এর তুলনায় বেশ কম হয় এই কক্ষপথে সাধারণত জিপিএস স্যাটেলাইটগুলাতে থাকে।

জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (GEO-Geostationary Earth Orbit)

জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিটের স্যাটেলাইট পৃথিবীর পৃষ্ঠ হতে ৩৬,০০০ কি.মি. উপড়ে অবস্থান করে। এই স্যাটেলাইটের ক্ষমতা অনেক বেশি হয় টিভি এবং রেডিও ট্রান্সমিশনে এর কাজে জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট। ব্যাবহার করা হয়। সাধারণত অ্যান্টেনার একটা নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে এই কক্ষপথে


কাজের উপরে ভিত্তি করে স্যাটেলাইটের প্রকারভেদঃ

কাজের উপরে ভিত্তি করে স্যাটেলাইটকে বেশ কয়েকভাবে ভাগ করা যায় যেমন, ক্যুনিকেশন স্যাটেলাইট, ওয়েদার স্যাটেলাইট, ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট, প্রোগ্রাড স্যাটেলাইট, রেট্রোগ্রাড স্যাটেলাইট, হম্যান স্যাটেলাইট, পোলার স্যাটেলাইট, সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট ইত্যাদি। চলুন এগুলো  সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নেই এবার,

কমুনিকেশন স্যাটেলাইট (Communication Orbit):

নাম শুনেই  বোঝা   যাচ্ছে তথ্যের আদান প্রদান করার জন্য এই স্যাটেলাইট ব্যাবহার করা হয়। কমুনিকেশন এই সিস্টেমকে স্পেস কমুনিকেশনও বলা হয়ে থাকে। এর মাঝে ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট অন্তর্ভূক্ত। পাওয়ার সাপ্লাই, ট্রান্সমিটার বা প্রেরক যন্ত্র, রিসিভার বা গ্রাহক যন্ত্র এবং অ্যান্টেনা নিয়ে এই স্যাটেলাইট গঠিত।

কমুনিকেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমে আর্থ স্টেশনের ট্রান্সমিটার হতে মডুলেটেড সিগন্যাল বা মাইক্রোওয়েভ স্যাটেলাইটে পাঠানো  হয়। তারপরে স্যাটেলাইট মডুলেটেড সিগন্যালকে বিবর্ধিত করে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠায় এই ভাবে সিগন্যাল গ্রহন এবং সেটা বর্ধিত করে আবার গ্রাহক স্টেশনে পাঠাবার মাধ্যমেকমুনিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

ওয়েদার স্যাটেলাইট (Weather Orbit):

ওয়েদার স্যাটেলাইটের দ্বারা পৃথিবীর আবহাওয়া সংক্রান্ত ফটো ধারন করা হয়ে থাকে। কিছু ওয়েদার স্যাটেলাইট হলাে GE0s , coSM0s এবং TIR0s স্যাটেলাইট আবহাওয়া পর্যবেক্ষনের সকল কাজ ওয়েদার। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে

ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট (Navigation Orbit):

এই স্যাটেলাইট মূলত পথ নির্দেশনা করার কাজে ব্যাবহার করা হয় যেমন, সমুদ্রগামী জাহাজ ডিটেক্ট এবং বিমান ইত্যাদি এর পথ নির্দেশনা দিতে ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। GPSNAVSTAR এমনই একটি স্যাটেলাইট আবার জিপিএস এমন একটি স্যাটেলাইট নেভিগেশন মাধ্যম, এখানে সময়ে এবং যেকোন আবহাওয়াতেই নিরবিচ্ছিন্নভাবে যেকোনাে তথ্য এবং পৃথিবীর যে কোন অবস্থানের ছবি পাঠানাে যায় ২৪টা স্যাটেলাইট দ্বারা এই সিস্টেম তৈরি করা হয়।

প্রোগ্রাড  স্যাটেলাইট (Prograde Orbit):

প্রোগ্রাড স্যাটেলাইটের অরবিটের সাথে পৃথিবীর কোন এক সমকোন এর থেকে কম হয়ে থাকে। সাধারনত পৃথিবীর ঘূর্ণন যে দিকে হয় প্রোগ্রাড স্যাটেলাইটও একই দিকে ঘােরে

রেট্রোগ্রাড স্যাটেলাইট (Retrograde Orbit):

রেট্রোগ্রাড স্যাটেলাইট প্রোগ্রাড স্যাটেলাইটের ঠিক উল্টো কাজ করে। এই অরবিটের সাথে পৃথিবীর কোন এক সমকোন এর থেকে বেশি হয়ে থাকে। আবার এই স্যাটেলাইট পৃথিবী যে দিকে ঘোরে  তার বিপরীত দিকে ঘোরে   

হম্যান স্যাটেলাইট (Hohmann Transfer Orbit):

এই স্যাটেলাইট জিওস্টেশনারী স্যাটেলাইটের সাহায্যে ব্যাবহার করা হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে এর অরবিটে সিগন্যাল পেরন করার কাজে। এটি লো-আর্থ  অরবিটের স্যাটেলাইটেও হম্যান স্যাটেলাইট ব্যাবহার করা হয়। এই স্যাটেলাইটগুলোতে  সাধারনত উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে।

পোলার স্যাটেলাইট (Polar Orbit):

এই স্যাটেলাইটের অরবিটের সাথে পৃথিবীর কোন একদম এক সমকোন হয়ে থাকে। এটি NPOESS স্যাটেলাইট সমূহ প্রত্যেকবার ঘূর্ণনের সময় দক্ষিন মেরু এবং উত্তর মেরু এই দুই মেরুর উপড়ে দিয়েই চলে

সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট (Sun Synchronous Orbits- Satellite ):

এটির নাম সূর্যের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট এই স্যাটেলাইটগুলাতে  এমন ভাবে পৃথিবীর সাথে ঘােরে যাতে সবসময় সূর্যের আলোতে  এর উপরে পড়ে। তাই বলা চলে এগুলাতে  কখনই  অন্ধকারে থাকে না  CRYoSAT-2 একটি সান সিষ্ক্রোনাস অরবিট স্যাটেলাইট


গানিতিক সমীকরণঃ

উপগ্রহের ক্ষেত্রে গানিতিক সমীকরণ মেনে চলা হয়। নাহলে উপগ্রহের  কক্ষপথে চলতে সমস্যা হবে

এর মধ্যে অন্যতম সমীকরন হচ্ছেঃ

কক্ষপথ গতি সমীকরণঃ

Fnet = ( Msat • v2 ) / R

এখানে , Fnet= নেট সেন্ট্রিপেটাল বল,Msat= স্যাটেলাইটের ভর R হচ্ছে ব্যাসার্ধ

 

Fgrav = ( G • Msat • MCentral ) / R2

এখানে ,Fgrav মানে হচ্ছে মহাকর্ষীয় বল যা স্যাটেলাইটের উপর কাজ করছে MCentral হচ্ছে স্যাটেলাইটের সেন্ট্রাল বডির ভর

 

এখন Fnet Fgrav সমান ধরে নিয়ে আমরা পাই ,

Fgrav = Fnet

(Msat • v2) / R = (G • Msat • MCentral ) / R2

v2 = (G • MCentral ) / R


এখানে, G =  6.673 x 10-11 N•m2/kg2


স্যাটেলাইটের ত্বরণের সমীকরনঃ

 

a  হচ্ছে স্যাটেলাইটের ত্বরণ , MCentral হচ্ছে স্যাটেলাইটের সেন্ট্রাল বডির ভর এবং R হচ্ছে  স্যাটেলাইটের জন্য কক্ষপথের গড় ব্যাসার্ধ ( এর মধ্য বিন্দু থেকে পৃথিবীর মধ্যবিন্দু পর্যন্ত দূরত্ব )  

 


কক্ষীয় পর্যায়কালের সমীকরনঃ

T হচ্ছে স্যাটেলাইটের পর্যায়কাল, R স্যাটেলাইটের জন্য কক্ষপথের গড় ব্যাসার্ধ ( এর মধ্য বিন্দু থেকে পৃথিবীর মধ্যবিন্দু পর্যন্ত দূরত্ব )  এবং  G = 6.673 x 10-11 N•m2/kg2.

এটি হচ্ছে কেপলারের ৩য় সূত্র

 

উপগ্রহের মালিকানাঃ

জাতিসংঘের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর আউটার স্পেস অ্যাফেয়ার্সের (ইউএনওওএসএ) হিসাবে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত মহাকাশে স্যাটেলাইটের সংখ্যা হাজার ৬৩৫। প্রতিবছরই স্যাটেলাইটের সংখ্যা থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এর গতিবিধি নিয়ে কাজ করে এন২ওয়াইও.কম ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া ভুক্ত দেশগুলোর (কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস) সম্মিলিত স্যাটেলাইট সংখ্যা ১৫০৪টি, যুক্তরাষ্ট্রের ১৬১৬টি, চীনের ২৯৮টি, জাপানের ১৭২টি, ফ্রান্সের ৬৮টি (জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবে ১টি), ভারতের ৮৮টি, জার্মানির ৫২টি, কানাডার ৪৮টি, যুক্তরাজ্যের ৪২টি, ইতালির ২৭টি, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৪টি, স্পেনের ২৩টি, অস্ট্রেলিয়ার ২১টি, আর্জেন্টিনার ১৮টি, ইসরাইলের ১৭টি, ব্রাজিলের ১৭টি (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে ১টি এবং চীনের সঙ্গে যৌথভাবে ৩টি), ইন্দোনেশিয়ার ১৬টি, তুরস্কের ১৪টি, সৌদি আরবের ১৩টি, মেক্সিকোর ১২টি, সুইডেনের ১২টিসিঙ্গাপুরের ৯টি, ডেনমার্কের ৯টি, তাওয়ানের ৯টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৯টি, থাইল্যান্ডের ৯টি, নরওয়ের ৮টি, মালয়েশিয়ার ৬টি, কাজাখস্তানের ৬টি, আলজেরিয়ার ৬টি, নাইজেরিয়ার ৬টি, দক্ষিণ আফ্রিকার ৬টি, নেদারল্যান্ডসের ৬টি, গ্রীসের ৪টি, লুক্সেমবার্গের ৪টি। পাকিস্তান, চিলি, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনামের ৩টি করে; বেলারুশ ইকুয়েডর মিশর, চেক রিপাবলিক, উত্তর কোরিয়া ফিলিপিন্স, পোল্যান্ড এবং পর্তুগালের ২টি করে;

আজারবাইজান, বলিভিয়া, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, ইরাক, ইরান, লাটভিয়া, লাওস, লিথুনিয়া, মরক্কো, পেরু, স্লোভাকিয়া এবং উরুগুয়ের ১টি করে স্যাটেলাইট রয়েছে।

 এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অনেকগুলো স্যাটেলাইট বর্তমানে কক্ষপথে অবস্থান করছে। এগুলোর মধ্যে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর দ্যা এক্সপ্লয়টেশন অব মেরিওরোলজিক্যাল স্যাটেলাইটসের ৮টি, গ্লোবারস্টারের ৮৪টি, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ৮২টি, ইউরোপিয়ান টেলিকমিউনিকেশনস স্যাটেলাইট অর্গানাইজেশনের ৫১টি, আরব স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন অর্গানাইজেশনের ১৩টি, এশিয়া স্যাটেলাইট টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানির ৮টি, ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল স্যাটেলাইট অর্গানাইজেশনের ১৭টি, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের ৭টি, নিউইকোর ১টি, ন্যাটোর ৮টি, ওথ্রিবি নেটওয়ার্কের ১৬টি, অর্বকমের ৪১টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। আর ৫৭তম দেশ হিসেবে মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের গৌরব অর্জন করলো বাংলাদেশ।

প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ :

স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের আবিষ্কার মহাকাশ যাত্রার ইতিহাস খুব একটা পুরনো নয়। ষাটের দশকে প্রথমবারের মতো গৌরব অর্জন করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রও মহাকাশের উদ্দেশ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সক্ষম হয়। এরপর একে একে ফ্রান্স, জাপান, চীন ভারতসহ ৫৬টি দেশ মহাকাশ জয় করে। মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কৃতিত্ব সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের। ১৯৫৭ সালের অক্টোবর উৎক্ষেপিত স্পুৎনিক নামের কৃত্রিম উপগ্রহটির নকশা করেছিলেন সের্গেই করালিওভ নামের একজন ইউক্রেনীয়। একই বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুৎনিক- উৎক্ষেপণ করে।

স্পুৎনিক- লাইকা নামের একটা কুকুর বহন করে নিয়ে যায়। অবশ্য উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে লাইকা মারা যায়।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনা সফল হয় ১৯৫৮ সালের ৩১ জানুয়ারি। তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ এক্সপ্লোরার- এদিন মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়।রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পর ১৯৬৫ সালে মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সক্ষম হয় ফ্রান্স। ১৯৭০ সালে একই গৌরব অর্জন করে জাপান।বাংলাদেশের আগে সবশেষ তালিকায় যুক্ত হয় কোস্টারিকার নাম।পৃথিবীর মাত্র ১০টি দেশ নিজস্ব প্রযুক্তি উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে সক্ষম।এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, চীন, যুক্তরাজ্য, ভারত, ইসরাইল, ইউক্রেন এবং ইরান। দক্ষিণ এশিয়ায় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তালিকায় শীর্ষে ভারত। গেল বছর একদিনে ১০৪টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে ইতিহাস গড়ে দেশটি। এর আগে ২০১৪ সালে রাশিয়া এক সঙ্গে ৩৭টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছিল। এছাড়া, গেল বছর মে ''দক্ষিণ এশিয়া কৃত্রিম উপগ্রহ'' নামে একটি যৌথ প্রকল্পও শুরু করে ভারত।

দেশভিত্তিক প্রথম উৎক্ষেপিত কৃত্রিম উপগ্রহ

ক্রমিক নং         দেশ                                     সাল                          রকেটের নাম                    উপগ্রহের নাম

১।          সোভিয়েত ইউনিয়ন            ১৯৫৭                      স্পুটনিক-পিএস (রকেট)         স্পুটনিক-

২।          যুক্তরাষ্ট্র                            ১৯৫৮                           জুনো-                       এক্সপ্লোরার-

৩।         ফ্রান্স                               ১৯৬৫                           ডায়ামান্ট                       এস্ট.রিক্স

৪।          জাপান                             ১৯৭০                    ল্যাম্বডা-৪এস (রকেট)              ওসুমি

৫।          চীন                                 ১৯৭০                           লং মার্চ-                   ডং ফ্যাং হং-

৬।         যুক্তরাজ্য                           ১৯৭১                         ব্ল্যাক এ্যারো                  প্রোসপেরো এক্স-

৭।          ভারত                              ১৯৮০       স্যাটেলাইট লাঞ্চ ভিহাইকেল (এসএলভি)       রোহিণী

৮।         ইসরায়েল                           ১৯৮৮                            শ্যভিত                         ওফেক-

৯।         রাশিয়া                              ১৯৯২                         সোয়ুজ-ইউ                    কসমস-২১৭৫

১০।        ইউক্রেন                           ১৯৯২                         সাইক্লোন-                         স্ট্রেলা

১১।        ইরান                               ২০০৯                           সাফির-                          ওমিড

১২।        বাংলাদেশ                                     ২০১৮                          ফ্যালকন                        বঙ্গবন্ধু-

 

কিভাবে কাজ করে:

কৃত্রিম উপগ্রহ এমনভাবে পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান হয়, যাতে এর গতির সেন্ট্রিফিউগাল বা বহির্মুখীন শক্তি ওকে বাইরের দিকে গতি প্রদান করে - কিন্তু পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি একে পৃথিবীর আওতার বাইরে যেতে দেয় না। উভয় শক্তি কৃত্রিম উপগ্রহকে ভারসাম্য প্রদান করে এবং কৃত্রিম উপগ্রহটি পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। যেহেতু মহাকাশে বায়ুর অস্তিত্ব নেই তাই এটি বাধাহীনভাবে পরিক্রমণ করে কৃত্রিম উপগ্রহগুলো বৃত্তাকারে পরিক্রমণ করে না, তার গতি ডিম্বাকৃতির। টিভি বেতারসংকেত প্রেরণ এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী কৃত্রিম উপগ্রহগুলো সাধারণত পৃথিবীথেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। পৃথিবী থেকে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য পাঠানো হয়, কৃত্রিম উপগ্রহ সেগুলো গ্রহণ করে এবং বিবর্ধিত (এমপ্লিফাই) করে পৃথিবীতে প্রেরণ করে কৃত্রিম উপগ্রহ দুইটি ভিন্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করে সিগনাল (তথ্য) গ্রহণ এবং পাঠানোর জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পৃথিবীতে আসা সিগনাল অনেক দুর্বল বা কম শক্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে, তাই প্রথমে ডিস এন্টেনা ব্যবহার করে সিগনালকে কেন্দ্রীভূত করা হয় এবং পরে রিসিভার দিয়ে গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হয়

কৃত্রিম উপগ্রহের জ্বালানী:

কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর উৎক্ষেপণের সময়ই পর্যাপ্ত জ্বালানি গ্রহণ করতে হয়। কারণ মহাকাশে রিফুয়েলিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। তবে কিছু উপগ্রহ জ্বালানি হিসেবে সৌরশক্তি ব্যবহার করে। এদের গায়ে সৌরকোষ লাগানো থাকে, যা ব্যবহার করে থেকে সে সূর্য থেকে তার প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহণ করে

ব্যবহার:

মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেক কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে, বিশেষ করে কমিউনিকেশন (যোগাযোগ) এর কাজে স্যাটেলাইট অনেক বেশি ব্যবহৃত হয় বেশিরভাগ টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে এর মাধ্যমে তাছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ, টেলিফোন সংযোগ, উড়ন্ত বিমানে নেটওয়ার্ক প্রদান, দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক প্রদান, জিপিএস সংযোগসহ বিভিন্ন কাজে কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহৃত হয়

তবে ভূ-স্থির বা জিওস্টেশনারি উপগ্রহগুলো এক জায়গাতেই থাকে। এগুলো আবহাওয়া যোগাযোগ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহƒ হয়। পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইট উপবৃত্তাকার পথে ঘোরে। সাধারণত ৮০- হাজার ২০০ মাইল উচ্চতাবিশিষ্ট কক্ষপথে বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট পাঠানো হয়। কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে স্যাটেলাইটটি কত উচ্চতায় বসবে। যেমন উদ্ভিদ প্রাণী নিয়ে গবেষণা, বণ্যপ্রাণীর চরে বেড়ানো পর্যক্ষেণ, অ্যাস্ট্রোনমি এবং পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করার জন্য সায়েন্স স্যাটেলাইটকে বসানো হয় ৩০ হাজার থেকে হাজার মাইল উচ্চতায়।

 আবার গোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয় হাজার থেকে ১২ হাজার মাইল উচ্চতায় এক এক ধরনের স্যাটেলাইটের বৈশিষ্ট্য গঠন প্রণালী একেকরকম। তবে সব স্যাটেলাইটের মধ্যেই সাধারণত কিছু মিল আছে। স্যাটেলাইটের শরীর ধাতু সংকরের ফ্রেম দিয়ে তৈরি। একে বলে বাস। এতেই স্যাটেলাইটের সব যন্ত্রপাতি থাকে। প্রত্যেক স্যাটেলাইটে থাকে সোলার সেল এবং শক্তি জমা রাখার জন্য ব্যাটারি। এর পাওয়ার সিস্টেম প্রসেসকে পৃথিবী থেকে সবসময় মনিটর করা হয়। স্যাটেলাইটে একটি অনবোর্ড কম্পিউটার থাকে যা একে নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন সিস্টেমকে মনিটর করে। স্যাটেলাইটের আরেকটি মৌলিক বৈশিষ্ট হল এর রেডিও সিস্টেম অ্যান্টেনা।

কৃত্রিম উপগ্রহ এমনভাবে পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান হয়, যাতে এর গতির সেন্ট্রিফিউগাল বা বহির্মুখীন শক্তি ওকে বাইরের দিকে গতি প্রদান করে - কিন্তু পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি একে পৃথিবীর আওতার বাইরে যেতে দেয় না। উভয় শক্তি কৃত্রিম উপগ্রহকে ভারসাম্য প্রদান করে এবং কৃত্রিম উপগ্রহটি পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। যেহেতু মহাকাশে বায়ুর অস্তিত্ব নেই তাই এটি বাধাহীনভাবে পরিক্রমণ করে কৃত্রিম উপগ্রহগুলো বৃত্তাকারে পরিক্রমণ করে না, তার গতি ডিম্বাকৃতির।


সংঘর্ষ ভূপাতিত:

২০০৯ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার কৃত্রিম উপগ্রহ ইরিডিয়াম ৩৩ এবং রাশিয়ার কসমস ২২৫১ উপগ্রহের ধাক্কা লাগে। ঘটনাটি ঘটে সাইবেরিয়ার ৭৮৯ কিলোমিটার ওপরে। নাসা' উপগ্রহ বিজ্ঞানি মার্ক ম্যাটনি এমএসএসবিসি চ্যানেল কে জানান, দুটি গোটা কৃত্রিম উপগ্রহের সম্মুখ সংঘাতের ঘটনা এই প্রথম ঘটল।মহাশুন্যের ব্ল্যাক হোল, নিউট্রন স্টারের ছবি তোলা, এক্স-রে ইত্যাদির উৎসস্থল খুঁজে বের করার জন্য ১৯৯০ সালে জার্মানির উপগ্রহ রোসাটকে মহাকাশে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু মধ্যাকর্ষণজনিত কারণে বলয়ের মধ্যে চলে আসায় ২০১১ সালের ২২ কিংবা ২৩ অক্টোবরের মধ্যে এটি পৃথিবীর যে-কোন জায়গায় আঘাত হানে

Source: russianspaceweb.com, nasa.com, space.com , wikipedia.com ,britannica.com, statista.com

 

মন্তব্যসমূহ