শুক্রকে কেন লাল মরিচার গ্রহ বলা হয় ?



মরিচা:
লোহা যখন জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে, তখন এটি লোহা অক্সাইডে পরিণত হয়, যাকে আমরা সাধারণভাবে "মরিচা" বলে থাকি। এর রাসায়নিক সংকেত হলো 
Fe2O3nH2OFe_2O_3 \cdot nH_2O

মঙ্গল গ্রহ বা মরিচা গ্রহ:

মঙ্গল গ্রহকে "মরিচা গ্রহ" বলা হয়, কারণ এর পৃষ্ঠতল আয়রন অক্সাইড (Fe2O3) দিয়ে আবৃত। এটি মূলত মরিচার মতো দেখতে লাল বর্ণের একটি পদার্থ যা মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠকে লাল রঙের করে তুলেছে। এ কারণেই মঙ্গলকে লাল গ্রহ বা মরিচা গ্রহ বলা হয়। লাল গ্রহটির পৃষ্ঠে থাকা আয়রন অক্সাইডের ধুলিকণা এবং পাথরগুলির কারণেই একে এমন নামে ডাকা হয়।

মঙ্গল গ্রহের নামকরণ ও অবস্থান:

মঙ্গল গ্রহের নামকরণ হয়েছে রোমান যুদ্ধদেবতা মার্সের (Mars) নাম অনুসারে। সূর্য থেকে দূরত্ব অনুসারে এটি চতুর্থ গ্রহ। এটি পৃথিবীর ঠিক পরেই অবস্থান করছে এবং এর গড় দূরত্ব সূর্য থেকে ২২৭.৯ মিলিয়ন কিলোমিটার।

মঙ্গলের উপগ্রহ:

মঙ্গলের দুটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে, ডিমোস ও ফোবোস। ১৮৭৭ সালে আমেরিকান জ্যোতিষবিদ আসফ হল (Asaph Hall) এগুলো আবিষ্কার করেন। মঙ্গলের এই উপগ্রহগুলো বেশ কুৎসিত দেখতে এবং পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের মতো সুন্দর নয়।

মঙ্গলের ভূত্বক ও ধূলিকণা:

মঙ্গলের পৃষ্ঠ প্রধানত ব্যাসল্ট (basalt) দ্বারা গঠিত। ব্যাসল্ট হলো আগ্নেয় শিলা যা আগ্নেয়গিরি থেকে উদ্ভূত হয়। মঙ্গলের ভূত্বক আয়রন অক্সাইডের সূক্ষ্ম ধুলিকণায় আচ্ছাদিত। এই ধুলিকণা অনেকটা ট্যালকম পাউডারের মতো মিহি এবং এর পুরুত্ব ৬ থেকে ৩০ মাইল পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও মঙ্গলের মাটিতে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।

টেকটোনিক প্লেট ও আগ্নেয়গিরি:

মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠে প্রাচীনকালে টেকটোনিক প্লেট ছিল, যা ভূপৃষ্ঠের ফাটল ও গভীর গিরিখাত তৈরির জন্য দায়ী। পৃথিবীর মতো টেকটোনিক প্লেটের চলাচল না থাকায় বর্তমানে মঙ্গল ভূতাত্ত্বিকভাবে নিষ্ক্রিয়। তবে মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠে বিশাল বিশাল আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যেমন Olympus Mons, যা সৌরজগতের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি। মঙ্গলের ভূমিকম্পের গতিও পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে, যেমন ৭২৫ কিমি/ঘণ্টার গতিতে ভূমি ধস হতে পারে।

Valles Marineris গিরিখাত:

ভ্যালেস ম্যারিনেরিস (Valles Marineris) সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গিরিখাত যা মঙ্গলে অবস্থিত। এটি এতই বিশাল যে আমেরিকার পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার, প্রস্থে গড়ে ৩০০ কিমি এবং গভীরতা ৮ কিমি। এটি পৃথিবীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের তুলনায় অনেক বড় এবং গভীর।

মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ গঠন:

মঙ্গল গ্রহের ভূপৃষ্ঠ দুই ভাগে বিভক্ত - ম্যান্টল ও কোর। মঙ্গলের কেন্দ্রভাগ কঠিন লৌহ (iron), নিকেল (nickel), এবং সালফার (sulfur) দিয়ে গঠিত। মঙ্গলের কোনো অভ্যন্তরীণ চৌম্বক ক্ষেত্র নেই, তবে এর ভূপৃষ্ঠের কিছু অংশ চুম্বকায়িত হয়ে আছে যা একে সময়ে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র থাকার ইঙ্গিত দেয়।

পানি ও বায়ুমণ্ডল:

মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা এবং এর প্রধান উপাদান কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), প্রায় ৯৫.৭২%। মঙ্গলে পানি বরফ আকারে জমা রয়েছে, বিশেষ করে মাটির নিচে এবং পোলার বরফ ক্যাপগুলিতে। প্রাচীনকালে মঙ্গলে তরল পানির প্রবাহ ছিল বলে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, তবে বর্তমানে মঙ্গলের তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে -১৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে।

প্রাণের সম্ভাবনা:

মঙ্গলে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। মঙ্গলের মাটিতে বোরন উপাদান পাওয়া গেছে, যা RNA তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মঙ্গলের ধুলিকণা ও প্রাচীন ভূপৃষ্ঠের গবেষণায় প্রাণের অস্তিত্ব থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তবে এখনও এ নিয়ে নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি।






মন্তব্যসমূহ