ইতিহাস(History):
শ্রোডিঞ্জার সমীকরণ হল কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্যতম প্রধান একটি সমীকরণ, যা প্রথমে আর্নভিন শ্রোডিঞ্জার (Erwin Schrödinger) ১৯২৫ সালে প্রস্তাব করেন এবং ১৯২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন। শ্রোডিঞ্জারের এই কাজ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভিত্তি স্থাপন করতে বিশাল ভূমিকা পালন করে। এর আগে, পদার্থবিদরা পদার্থের চলাচল বা গতিবিধি ব্যাখ্যা করার জন্য মূলত নিউটনের গতি সমীকরণের উপর নির্ভর করতেন, যা শাস্ত্রীয় মেকানিক্সের ধারণা থেকে এসেছে। শাস্ত্রীয় মেকানিক্স বড় বস্তুর গতিবিধি ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হলেও, এটি ক্ষুদ্র কণা যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন বা নিউট্রনের গতিবিধি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারত না।
শ্রোডিঞ্জার উপলব্ধি করেন যে, এ ধরনের ক্ষুদ্র কণাগুলোর জন্য শাস্ত্রীয় মেকানিক্সের পরিবর্তে নতুন ধরনের তত্ত্ব প্রয়োজন, যা তাদের তরঙ্গ প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে পারে। এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই তিনি তার সমীকরণটি তৈরি করেন, যা কণার তরঙ্গ ক্রিয়াকে (wave function) ব্যবহার করে তাদের আচরণ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে।
মূলনীতি (Principle):
শ্রোডিঞ্জার সমীকরণ পদার্থের তরঙ্গ প্রকৃতির সাথে সংযুক্ত। এটি একটি তরঙ্গ সমীকরণ যা বলে দেয় যে, কোনো কণা যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন ইত্যাদি শুধুমাত্র একটি বিন্দুতে অবস্থান করে না বরং এর একটি তরঙ্গধর্মী প্রকৃতি আছে। শ্রোডিঞ্জার সমীকরণ কণার এই তরঙ্গ ক্রিয়াকে (wave function) ব্যবহার করে কণার সম্ভাব্য অবস্থান এবং শক্তি নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
এই সমীকরণের মাধ্যমে বলা যায় যে, কোনো কণার অবস্থানকে নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, তবে সেই কণা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে থাকার সম্ভাবনা কী হতে পারে তা এই তরঙ্গ ক্রিয়া ব্যবহার করে নির্ণয় করা যায়।
উদাহরণ (Example):
ধরা যাক, আমরা একটি ইলেকট্রনকে হাইড্রোজেন পরমাণুর মধ্যে দেখতে চাই। ইলেকট্রনের অবস্থান নির্ধারণ করতে আমরা শ্রোডিঞ্জার সমীকরণ ব্যবহার করি। ইলেকট্রনের তরঙ্গ ক্রিয়া ψ
ব্যবহার করে তার সম্ভাব্য অবস্থান বের করা যায়, কিন্তু তা নিশ্চিত করা যায় না। অর্থাৎ, ইলেকট্রনটি কোনো এক নির্দিষ্ট বিন্দুতে অবস্থান করছে না বরং তার চারপাশে একটি সম্ভাবনা বিতরণ তৈরি করছে। এই তরঙ্গ ক্রিয়া এর বর্গ ইলেকট্রনটির সেই স্থানে পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ইলেকট্রনের তরঙ্গ ক্রিয়া হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি শক্তিশালী হয়, তবে তার সেই এলাকায় উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।গাণিতিকভাবে:
একটি সরল উদাহরণ হিসেবে আমরা ধরি, এক-মাত্রিক স্থানে কোনো কণা সম্ভাব্যতা ক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থান করছে। শ্রোডিঞ্জার সমীকরণ এই কণার জন্য এভাবে লেখা যায়:
এখানে,
- হলো হ্রাসপ্রাপ্ত প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক,
- হলো কণার ভর,
- হলো সম্ভাব্যতা শক্তি ক্ষেত্র (potential energy),
- হলো কণার মোট শক্তি,
- হলো কণার তরঙ্গ ক্রিয়া।
শ্রোডিঞ্জার সমীকরণের দুটি রূপ রয়েছে, যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয়। নিচে এই দুটি সমীকরণের বর্ণনা দেওয়া হলো:
১. সময় নিরপেক্ষ শ্রোডিঞ্জার সমীকরণ (Time-independent Schrödinger Equation):
এই সমীকরণটি স্থির অবস্থা (steady state) বা এমন সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত হয় যেখানে কণার শক্তি নির্দিষ্ট এবং সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না।
সমীকরণটি হলো:
এখানে,
- হলো হ্যামিল্টোনিয়ান অপারেটর, যা সিস্টেমের মোট শক্তি নির্দেশ করে।
- হলো তরঙ্গ ক্রিয়া (wave function)।
- হলো সিস্টেমের শক্তি।
এই সমীকরণের মাধ্যমে আমরা নির্দিষ্ট শক্তির স্তরে থাকা কোনো কণার অবস্থান এবং আচরণ নির্ধারণ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, একটি ইলেকট্রনের স্থির অবস্থা (stationary state) বা শক্তি নির্দিষ্ট অবস্থায় এর শক্তি বের করা যায়।
২. সময় নির্ভর শ্রোডিঞ্জার সমীকরণ (Time-dependent Schrödinger Equation):
এই সমীকরণটি এমন সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত হয় যেখানে কণার অবস্থা এবং শক্তি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। এটি সিস্টেমের গতিশীলতা (dynamics) বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়।
সমীকরণটি হলো:
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন