গিনি সহগ (Gini Coefficient)

 



গিনি সহগ (Gini Coefficient) কী?

গিনি সহগ (Gini Coefficient) হলো অর্থনীতি এবং পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যা আয়ের বা সম্পদের অসমতার পরিমাণ পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যা থেকে এর মধ্যে থাকে।

  • মানে সম্পূর্ণ সমতা (সবাই সমান সম্পদ বা আয় পাচ্ছে)।
  • মানে সম্পূর্ণ অসমতা (একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সব সম্পদ ধরে রেখেছে এবং অন্যরা কিছুই পাচ্ছে না)।

গিনি সহগ লরেঞ্জ কার্ভ (Lorenz Curve)-এর ভিত্তিতে নির্ণয় করা হয়। লরেঞ্জ কার্ভ একটি ভিজ্যুয়াল পদ্ধতি, যা জনসংখ্যার মধ্যে আয়ের বণ্টনের চিত্র তুলে ধরে।


গিনি সহগের গাণিতিক সংজ্ঞা:

গিনি সহগের সূত্র হলো:

G=1201L(x)dxG = 1 - 2 \int_{0}^{1} L(x) dx

এখানে:

  • GG = গিনি সহগ
  • L(x)L(x) = লরেঞ্জ কার্ভ, যা xx-এ জনসংখ্যার আয় বা সম্পদের বণ্টন নির্দেশ করে।
  • 01L(x)dx\int_{0}^{1} L(x) dx = লরেঞ্জ কার্ভের নিচের এলাকা।

গিনি সহগ নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি:

G=i=1nj=1nxixj2n2xˉG = \frac{\sum_{i=1}^n \sum_{j=1}^n |x_i - x_j|}{2n^2 \bar{x}}

এখানে:

  • nn = মোট জনসংখ্যা,
  • xi,xjx_i, x_j = আয় বা সম্পদ,
  • xˉ\bar{x} = গড় আয়।

গিনি সহগ কীভাবে কাজ করে:

গিনি সহগ মূলত একটি অনুপাত হিসাব করে। এটি লরেঞ্জ কার্ভের নিচের এলাকা এবং একটি কাল্পনিক সম্পূর্ণ সমতার রেখার নিচের এলাকা পরিমাপ করে।

  1. লরেঞ্জ কার্ভ: এটি দেখায় জনসংখ্যার নির্দিষ্ট শতাংশ কত আয় বা সম্পদ ধরে রেখেছে।
  2. সম্পূর্ণ সমতার রেখা: একটি কাল্পনিক রেখা, যেখানে আয় বা সম্পদ পুরোপুরি সমানভাবে বণ্টিত।

গিনি সহগ লরেঞ্জ কার্ভ এবং সম্পূর্ণ সমতার রেখার মধ্যবর্তী ফাঁক নির্দেশ করে।


গিনি সহগের মান ব্যাখ্যা:

  • ০: সম্পূর্ণ সমতা। সবাই একই পরিমাণ আয় বা সম্পদ পায়।
  • ১: সম্পূর্ণ অসমতা। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সব আয় বা সম্পদ পায়।
  • আন্তর্জাতিক মান: বাস্তবে গিনি সহগ সাধারণত ০.২৫ থেকে ০.৬০ এর মধ্যে থাকে।

উদাহরণ:

ধরা যাক, পাঁচজনের একটি সমাজে আয়ের বণ্টন নিম্নরূপ:

  • ব্যক্তি ১: ১০ টাকা
  • ব্যক্তি ২: ২০ টাকা
  • ব্যক্তি ৩: ৩০ টাকা
  • ব্যক্তি ৪: ৪০ টাকা
  • ব্যক্তি ৫: ৫০ টাকা

এই বণ্টন প্রায় সমান, তাই গিনি সহগ খুব কম হবে।

অন্যদিকে, যদি পাঁচজনের মধ্যে একজন ব্যক্তি ৯০ টাকা পায় এবং বাকিরা প্রত্যেকে ১০ টাকা করে পায়, তখন গিনি সহগ অনেক বেশি হবে, কারণ এখানে আয় খুব অসমভাবে বিতরণ হয়েছে।


গিনি সহগের ব্যবহার:

  1. অর্থনৈতিক বৈষম্য: গিনি সহগ প্রধানত অর্থনৈতিক বৈষম্য পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।
  2. আন্তর্জাতিক তুলনা: বিভিন্ন দেশের মধ্যে আয়ের অসমতার তুলনা করতে।
  3. নীতি নির্ধারণ: সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে এই সূচক ব্যবহার করে, যেমন কর ব্যবস্থার পরিবর্তন বা সামাজিক কল্যাণ কার্যক্রম প্রণয়ন।
  4. ডেটা সাইন্স এবং মেশিন লার্নিং: বৈষম্যের মাত্রা বিশ্লেষণ করতে।

গিনি সহগের সুবিধা:

  1. সহজ এবং স্পষ্ট: এটি একটি সংখ্যা দ্বারা অসমতা ব্যাখ্যা করতে পারে।
  2. তুলনামূলক: বিভিন্ন সময় বা অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্যের তুলনা করতে সহজ।
  3. লরেঞ্জ কার্ভের সাথে ভিজ্যুয়ালাইজেশন সম্ভব।

গিনি সহগের সীমাবদ্ধতা:

  1. এটি আয়ের মাত্রা নয়, বরং আয়ের বণ্টন পরিমাপ করে। ফলে একই গিনি সহগ থাকা দুটি দেশের আয় পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।
  2. এটি জনসংখ্যার অন্তর্নিহিত বৈচিত্র্যকে বিবেচনা করে না।
  3. গিনি সহগের মান কী কারণে পরিবর্তিত হয়েছে, তা সরাসরি বোঝা যায় না।

গিনি সহগের বাস্তব ব্যবহার:

  1. দেশভিত্তিক বৈষম্য: উন্নয়নশীল দেশে গিনি সহগ সাধারণত বেশি থাকে, যেখানে উন্নত দেশে এটি তুলনামূলক কম।
  2. শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার সমতা মূল্যায়নেও এটি ব্যবহৃত হয়।
  3. কর ব্যবস্থা: আয়ের বৈষম্য কমাতে ন্যায্য কর কাঠামো তৈরি করতে।

গিনি সহগের উদাহরণ (আন্তর্জাতিক):

  • ডেনমার্ক: গিনি সহগ প্রায় ০.২৫, যা সমতার নিদর্শন।
  • দক্ষিণ আফ্রিকা: গিনি সহগ প্রায় ০.৬০, যা বৈষম্যের নিদর্শন।

মন্তব্যসমূহ