স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স (Statistical Mechanics) পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা যা পরিসংখ্যান পদ্ধতি ও সম্ভাব্যতত্ত্ব ব্যবহার করে বৃহৎ সংখ্যক ক্ষুদ্র কণার সমষ্টিগত আচরণ ব্যাখ্যা করে। এটি থার্মোডাইনামিক্সের ম্যাক্রোস্কোপিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে মাইক্রোস্কোপিক স্তরের কণার আচরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করে।
ইতিহাস: স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্সের ভিত্তি স্থাপন করেন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল, লুডউইগ বোল্টজমান এবং জোসিয়া উইলার্ড গিবস। ম্যাক্সওয়েল গ্যাসের কণার গতিবিধির পরিসংখ্যানগত বণ্টন নিয়ে কাজ করেন, বোল্টজমান এনট্রপি ও থার্মোডাইনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র ব্যাখ্যা করেন, এবং গিবস এই ক্ষেত্রটিকে সুসংগঠিত করেন ও "স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স" শব্দটি প্রবর্তন করেন।
সংজ্ঞা ও মৌলিক নীতিমালা: স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স ম্যাক্রোস্কোপিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে মাইক্রোস্কোপিক স্তরের কণার সম্ভাব্যতামূলক অবস্থার সমষ্টি হিসেবে ব্যাখ্যা করে। এটি কণার অবস্থার সম্ভাব্যতা বণ্টন নির্ধারণের জন্য এনসেম্বল (ensemble) ধারণা ব্যবহার করে, যেখানে প্রতিটি এনসেম্বল একটি সম্ভাব্য মাইক্রোস্টেট উপস্থাপন করে। এনসেম্বলের গড় আচরণ ম্যাক্রোস্কোপিক বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে সম্পর্কিত।
শ্রেণীবিভাগ: স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্সের প্রধান এনসেম্বুলগুলো হলো:
-
মাইক্রোক্যানোনিক্যাল এনসেম্বল: নির্দিষ্ট শক্তি, ভলিউম ও কণার সংখ্যা সহ বিচ্ছিন্ন সিস্টেম।
-
ক্যানোনিক্যাল এনসেম্বল: নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, ভলিউম ও কণার সংখ্যা সহ সিস্টেম, যা তাপীয় পরিবেশের সাথে সমতুল্য।
-
গ্র্যান্ড ক্যানোনিক্যাল এনসেম্বল: নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, ভলিউম ও রাসায়নিক পটেনশিয়াল সহ সিস্টেম, যেখানে কণার সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে।
গাণিতিক সমীকরণ: স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্সে এনট্রপি (S) সাধারণত গিবসের এনট্রপি সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করা হয়: এখানে, হলো বোল্টজমান ধ্রুবক, হলো i-তম মাইক্রোস্টেটের সম্ভাব্যতা, এবং সমীকরণটি সকল মাইক্রোস্টেটের উপর সমষ্টিগত।
প্রয়োগসমূহ: স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্সের প্রয়োগ ক্ষেত্রগুলোতে রয়েছে:
-
তাপীয় গুণাবলী: উত্তাপ ধারণ ক্ষমতা, তাপ পরিবাহিতা ইত্যাদি।
-
পরমাণু ও কণার পদার্থবিজ্ঞান: কণার আচরণ ও পারস্পরিক ক্রিয়া বিশ্লেষণ।
-
উচ্চতর পদার্থবিজ্ঞান: সুপারকন্ডাকটিভিটি, সুপারফ্লুইডিটি ইত্যাদি জটিল প্রপঞ্চের ব্যাখ্যা।
-
জৈব পদার্থবিজ্ঞান: জীবাণু ও নিউরনের আচরণ বিশ্লেষণ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন